যশোর কারাগারে ৩৬ জনের ফাঁসি কার্যকর : দিন গুনছে দণ্ডিত ৯৭ জন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার অলোচিত ধর্ষক-খুনি মিন্টুু ও আজিজুলের ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩৫ ও ৩৬তম ফাঁসি কার্যকর করা হলো। গতকাল সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর গত ৫০ বছরে নানা অপরাধে এখন পর্যন্ত এই কারাগারে ৩৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হলো। তবে এখনো এই কারাগারে কোনো নারী আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়নি। এছাড়া কনডেম সেলে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ৯৭ জন ফাঁসির দ-প্রাপ্ত। এর মধ্যে পাঁচজন নারী। আর ৯২ জন পুরুষ।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন কারাগার হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার। ১৮৭৫ সালে নির্মিত এই কারাগারে সব সময়ই বন্দী থাকে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি আসামি। বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ও ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ এক হাজার ২১৭ জন বন্দী রয়েছে এই কেন্দ্রীয় কারাগারে। এছাড়া নানা অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৯৭ জন আসামি কনডেম সেলে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে বেনজীর আহম্মেদ শিপন নামে এক কয়েদি ক্ষমা পেয়েছেন। কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করতে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক জল্লাদ কাজ করেছেন। যশোর কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর করা হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ অক্টোবর। এরপর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এক এক করে ৩৪ আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কারাগারটিতে সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে জোড়া ফাঁসি কার্যকরের মধ্যে দিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৬ জনে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে জোড়া ফাঁসি কার্যকর হয়েছিলো এই কারাগারে। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন ওরফে মনোয়ার মেম্বার হত্যাকা-ের দায়ে দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দ-প্রাপ্ত দুজন হলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম (৬০) ও মৃত আকছেদ আলীর ছেলে গোলাম রসুল ঝড়– (৬২)।
১৯৯৪ সালের ২৮ জুন নিজগ্রাম চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে চরমপন্থী ক্যাডারদের হাতে খুন হন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনোয়ার হোসেন। তিনি স্থানীয় কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের দুই মেয়াদে ইউপি সদস্য ছিলেন। তাকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এই হত্যা মামলার এক যুগ পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ঝড়ু ও মোকিমসহ তিনজনকে ফাঁসি ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। পরে উচ্চ আদালত ঝড়– ও মোকিমের ফাঁসি বহাল রেখে বাকি সবাইকে খালাস দেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদসহ দলটির পাঁচ নেতাকর্মীকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার। দ-প্রাপ্তরা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুরের রাজনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান, কুর্শা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলার সময় ব্রাশ ফায়ারে জাসদের পাঁচজন নেতা নিহত হন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ ছাড়াও নিহত হন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরায়েল হোসেন এবং শমসের ম-ল। এই হত্যাকা-ের পাঁচ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ অগাস্ট ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হলে ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট ৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন, একজনকে খালাস দেন ও ১২ জনের সাজা মওকুফ করেন। হত্যাকা-ের প্রায় ১৭ বছর পর অভিযুক্ত তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় কারাগার যশোরে।
এদিকে গতকাল সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুই বান্ধবীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর খুনের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গার অলোচিত ধর্ষক-খুনি কালু ও আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হলো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More