যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীকে হত্যা : আটকের কয়েকঘণ্টা পর বাড়ি ফিরলেন অভিযুক্ত স্বামী

দামুড়হুদার জুড়ানপুরে টাকা ফ্রিজ গয়নার দাবিতে নির্যাতনসহ অভিযোগের পাহাড় জাকিরুলের বিরুদ্ধে
জুড়ানপুর প্রতিনিধি: দামুড়হুদার জুড়ানপুরে সুফিয়া খাতুন (৩২) নামে দুই সন্তানের জননীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় তার স্বামী জাকিরুল ইসলাম তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে ওই ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত সুফিয়া খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের মাদরাসাপাড়ার রাজমিস্ত্রি জাকিরুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রায় ১৮ বছর আগে জুড়ানপুর গ্রামের মাদরাসাপাড়ার নিজাম উদ্দিনের ছেলে জাকিরুল ইসলামের সাথে একই গ্রামের মসজিদপাড়ার ইসলাম আলীর মেয়ে সুফিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবি করে আসছিলো জাকিরুল। শ্বশুরবাড়ি থেকে কয়েকবার মোটাঅঙ্কের টাকা নিয়েও বারবার সে আরও টাকা দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে সে প্রায়ই তার স্ত্রী সুফিয়াকে মারধর করতো।
নিহতের বড় ভাই আব্দুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে জাকিরুল আবারও মেহেরপুরের সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ময়না খাতুন নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। নির্যাতন মারধরের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী প্রায় এক মাস ছিল তার বাড়িতে। বিভিন্নভাবে আমার একমাত্র বোনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে টাকা, ফ্রিজ, গয়না ও মোটরসাইকেলের দাবি করে সে। আমাদের সামর্থ অনুযায়ী ধার দেনা করে তার আবদার মিটিয়েছি। গত ৩ বছর ধরে আমার বোনকে নির্যাতন করে আসছে জাকিরুল। আমরা মেটাতে গেলে আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মারতে আসে জাকিরুল। এতো কিছুর পরও দুই সন্তানের কথা ভেবে সংসার করে আসছিলো সুফিয়া। আমার বোনকে তার সংসার থেকে সরানোর জন্য একটা এক বছর যাবত পরিকল্পনা করতে থাকে জাকিরুল।
২০২০ সালের মার্চ মাসের দিকে আমার বোনকে জাকিরুল হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতন করে একটা দাঁত ভেঙে দেয়। গত ২৮ ডিসেম্বর আবারও সুফিয়াকে মারধর করে হাত ও পা জখম করে দেয়। পরে তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন থাকার পর বাড়ি ফেরে আমার বোন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আমরা সুফিয়াকে দেখতে গেলে আমাদের ধাক্কা দিয়ে বাড়ির গেট থেকে বের করে দেয় জাকিরুল। পরে রাত আড়াইটার দিকে আমার বাড়ির সামনে এসে একজন চিৎকার করে বলেন, তোমার বোন মারা গেছেন।
নিহতের মা আছিয়া খাতুনের অভিযোগ, একবার আমার মেয়ে অপমান সহ্য করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সেবার সে বেঁচে যায়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুনরায় সুফিয়াকে মারধর করে তার স্বামী। তার শরীর দলে চটকে দেয় সে। সুফিয়া আমাকে ফোন করে আসতে বলে। পরে ফোনটি আছাড় মেরে ভেঙে দেয় জাকিরুল। খবর পেয়ে আমরা গেলে বাড়ির গেট থেকে বের করে দেয় সে। রাত আড়াইটার দিকে জাকিরুল কবিরাজ নিয়ে আসে সুফিয়ার চিকিৎসা করাতে। পরে শুনতে পাই আমার মেয়ে মারা গেছে। আমার মেয়ের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীর ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নেয়া হয় নিহতের স্বামী জাকিরুলকে। জাকিরুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। আমি তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। আমি তাকে হত্যা করিনি। বিষয়টি মিথ্যা।
এদিকে, ঘটনাস্থলের ছবি নিতে গেলে স্থানীয় এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে দামুড়হুদা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক কামরুল হাসান ও কনস্টেবল আবদুর রহিম। স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন ঘটনাস্থলে ছবি নিতে গেলে পুলিশ আমাকে বাধা দেয় এবং লাঞ্ছিত করে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কোন অভিযোগ করেনি নিহতের পরিবার। অভিযোগ পেলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক জাকিরুলকে আপাতত তার পরিবারের জিম্মায় বাড়ি পাঠানো হয়েছে। আর সাংবাদিকের সাথে হয়তো দায়িত্বরত পুলিশের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।
এদিকে, রাত ৮টার দিকে জুড়ানপুর গ্রামের কবরস্থানে নামাজের জানাজা শেষে নিহত সুফিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More