স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীসহ উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত : শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা : আটক ২০

ঝিনাইদহে পৌর নির্বাচন প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে পৌর নির্বাচনে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীসহ উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের মডার্ন মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও তার বড় ভাইসহ চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় প্রায় ২০ জনকে আটক করেছে। ঘটনার পর জেলা শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বুধবার বিকালে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে শহরের ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় নৌকার প্রার্থী আব্দুল খালেকের কর্মী-সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার হিজলের কর্মী-সমর্থকদের হাতাহাতি শুরু হয়। খবর পেয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিজল ঘটনাস্থলে গিয়ে তার সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ের তার ওপর প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। এরপর যুবলীগ নেতাকর্মীরা শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় দফায় দফায় মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় জেলা যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১৫-২০ জনকে আটক করে।

পরে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ তাদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিজল তার লাইসেন্সকৃত শর্টগান থেকে গুলি ছুঁড়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেন।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিজল অভিযোগ করেন, পৌর এলাকার উদয়পুর গ্রামে জনসংযোগ করে গোবিন্দপুর এলাকায় আসামাত্র আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের সর্মথকরা হঠাৎ করে হামলা শুরু করে। এ সময় ইাটপাটকেল নিক্ষেপসহ বেদমভাবে মারপিট করা হয় তাদের। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করলে গুরুতর আহত হন তিনি। একই সময় বড় ভাই পিপুলকে বেদমভাবে প্রহার করতে থাকে হামলাকারীরা। তিনি আরো অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সর্মথকদের হামলায় আরও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটনানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নিজস্ব লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষনের কথা স্বীকার করেন মেয়র প্রার্থী হিজল।

এ ঘটনার বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবউল হাই এমপি বলেন, এক পক্ষে ঘটনা ঘটেনি। দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আহত হয়েছে বলে শুনেছি। তিনি অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর লোকজন আওয়ামীলীগের সর্মথকদের ওপর আগে চাড়াও হয়েছে এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর থেকে পিস্তলের গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। গুলিবর্ষণ করা নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো অভিযোগ করেন, পরবর্তী সময়ে জেলা শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় পুলিশ আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠি পেটা করেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতির অভিযোগে বিষয়ে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলাকারীরা সেখানে অবস্থান করছে এবং রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করছে। এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং দুইজনকে আটকের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। এতে করে উপস্থিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করেছে বলে জানান তিনি। সেই সাথে জেলা শহরে পুলিশের টহল জোরদার করার কথাও জানান এসপি।

এদিকে সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে গোটা পৌর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাড়া-মহল্লায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, ১৫ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছে চারজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মো. আব্দুল খালেক, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহারিয়ার জাহিদী হিজল, মিজানুর রহমান মাসুম এবং ইসলামী অন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More