সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা রুখে সম্প্রীতির সমাজ গঠনে কাজী নজরুলের সাহিত্য কর্ম চর্চা এখন জরুরি

চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি কবির নাতনি খিলখিল কাজীর অভিমত

 

স্টাফ রিপোর্টার: সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা রুখতে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য কর্মকে সামনে এনে সাম্যের আহ্বান জানিয়েছেন কবির দোহিত্রী খিলখিল কাজী। চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিশ্ব সাহিত্যে বিস্ময় কবি কাজী নজরল ইসলাম সাহসিকতার সাথে যে দর্শন রেখে গেছেন তা মেলে ধরতে পারলে সম্প্রীতির শান্তিপূর্ণ সমাজ পাবে প্রজন্ম। এটা করা এখন আমাদের সামাজিক দায়িত্বেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবর্ধিত অতিথি খিলখিল কাজীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও বিশেষ উপহার তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. শাহীনুর হায়দার, প্রধান অতিথি জীবননগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লেখক সংঘের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক গোলাম মর্তুজা ও প্রধান আলোচক দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক প্রকাশক সরদার আল আমিন। লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক প্রেমের কবি ময়নুল হাসানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানমালায় বিশেষ অতিথি আলোচক চুয়াডাঙ্গার কৃতিসন্তান বরেণ্য নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এমএ মান্নান, শ্রোতানন্দিত সঙ্গীতশিল্পী রাহাত আরা গীতি ও বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আব্দুল গফুর, কৃষিবিদ নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম, জেলা লেখক সংঘের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী, লেখক সংঘের সহসভাপতি ওমর আলী মাস্টার, সহসভাপতি রবিউল ইসলাম সুকলাল, সহসভাপতি আবুল কাশেম মাস্টার ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট সভাপতি মাহতাব উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন প্রথম আলো প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, লেখক সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজ সামজী, যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক সামসাদ রানু, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আলিম, অর্থসম্পাদক আকলিমা খাতুন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি।

সংবর্ধিত অতিথি খিলখিল কাজি বক্তব্য বলেন, চরম সংগ্রামী জীবন ছিলো কাজী নজরুল ইসলামের। তিনি ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউরোপে নেয়া হলে হয়তো সুচিকিৎসা পেতেন। নেয়া হয়েছে যখন তখন বড় দেরি হয়ে গেছে। জীবনের যতোটুকু সময় তিনি পেয়েছেন ততোটুকুই মানুষের জন্য, মানুষের মানুষত্ব জাগিয়ে তুলে সাম্য সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। তার লেখনিতে, তার রাজনীতিতে এটা স্পষ্ট। তার মতো করে এখন পর্যন্ত কেউ-ই সাম্য সম্প্রীতির কথা বলে যেতে পারেননি। তিনি শুধু বিদ্রোহী নন, তিনি ছিলেন সুন্দর সমাজ গঠনের নির্দেশক। তার রেখে যাওয়া সাহিত্য কর্ম, তার নিদের্শনা, তার দর্শন যদি আমরা যথযথভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেশে কেন, বিশ্বের কোথাও সম্প্রদায়িক হাঙ্গামা থাকবে না। অথচ আমরা কাজী নজরুল ইলামের দিকে এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না।

খিলখিল কাজি একজন গবেষক, তিনি নজরুল ইসলাম ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য। সঙ্গীতশিল্পী। আবৃত্তিও করেন চমৎকার। অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি তার দাদার লেখা বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেন। এছাড়াও বিশেষ বক্তা খিলখিল কাজীর সফর সঙ্গী এমএ মান্নান, রাহাত আরা গীতি গান গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানের সভাপতিও গান গেয়ে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বরচিত কবিতা-ছড়া আবৃত্তি করেন যারা তাদের মধ্যে রয়েছেন- দেশের ছড়াসম্রাট আহাদ আলী মোল্লা, হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দার, ময়নুল হাসান, শামীমা আক্তার, মজরুল ইসলাম রূপান্তর, সামসাদ রানু, আফসানা কনা, আকলিমা খাতুন, কেএম জেসমিন আক্তার, আশরাফুল আলম, কবি আব্দুল কুদ্দুস, অমিনুল ইসলাম চৌধূরী, সিরাজ সামজী, ডা. শাহীনুর হায়দার. ওমর আলী মাস্টার, হাবিবুর রহমান, আসিফ জাহান, রঘুনাথ পাল, কাশেম মাস্টার প্রমুখ।

বক্তব্য দিতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গোলাম মর্তুজা বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার সূত্রধরে তার নাতি খিলখিল কাজীকে কাছে পেয়ে সত্যিই আমরা গর্বিত। যার ছবি দেখতাম, টিভিতে যার গান শুনে মুগ্ধ হতাম, তাকে কাছে পাওয়ার মজাটাই আলাদা। শুধু কাছে পাওয়া নয়, তাকে আমরা লেখক সংঘের মাধ্যমে সংবর্ধিত করতে পেরে আনন্দিত। মাঝে মাঝে খিলখিল কাজীকে এভাবে কাছে পেলে আমাদের সাথে কবির আত্মার যে সম্পর্ক রয়েছে তা আরও গাঢ় হবে। বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধান আলোচকও অভিন্ন মন্তব্য করে বলেন, খিলখিল কাজীকে শুধু কবির নাতি হিসেবেই নয়, তার গবেষণাসহ নজরুল সাহিত্যচর্চায় গণআন্দোলন সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্যও তার পাশে দাঁড়ানো দরকার, দরকার তাকে সম্মানিত করা। চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘ তাকে সংবর্ধিত করে সঠিক কাজটিই করেছে। লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবে গুণী মানুষদের সম্মানিত করে তাদের কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার যে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More