চুয়াডাঙ্গায় পচা-বাসি ভুড়ি বিক্রি : প্রতিবাদ করায় ক্রেতা লাঞ্ছিত

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে অভিযোগ জানাতে বললেন ইউএনও : ভোক্তা অধিকার? 

স্টাফ রিপোর্টার: গরুর পচা-বাসি ভুড়ি বিক্রির অভিযোগ করে প্রশাসনিক সহযোগিতা পেলেনই না বরং কসাইয়ের লাঞ্ছনার শিকার হলেন ক্রেতা। নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন ইউএনও এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ওই অসাধু গোশতো ব্যবসায়ীর কাছে হেরে গিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন ভুক্তভোগী ওই যুবক। শুধু তাই নয়, প্রশাসনে অভিযোগ করার কারণে ওই অসাধু ব্যবসায়ী সোহেল কসাইয়ের নানা হুমকিরও মুখোমুখি হন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের নিচের বাজারের মাংসপট্টিতে। অভিযুক্ত সোহেল কসাই চুয়াডাঙ্গা শহরের জ্বীনত্বলা মল্লিকপাড়ার মৃত সাদা আলীর ছেলে।

ভুক্তভোগী চুয়াডাঙ্গার কেদারগঞ্জ এলাকার ওই যুবক জানান, মঙ্গলবার নিচের বাজারের মাংসপট্টি থেকে দুই কেজি গরুর ভুড়ি কেনেন তিনি। বাড়ি ফিরে দেখেন ভুড়িটি সম্পূর্ণ পচা ও দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। সাথে সাথে ভুড়ি নিয়ে আবারও বাজারে যান তিনি। সেসময় গোশত বিক্রেতা সোহেল কসাইকে না পেয়ে আবারও বাড়ি ফিরে যান। পরদিন বুধবার সকাল ১০টার দিকে আবারও সোহেল কসাইয়ের কাছে যান ওই যুবক। ওইসময়ও দেখা যায় বাসি পচা ভুড়ি বিক্রি করতে। তাকে পচা ও দূর্গন্ধযুক্ত ভুড়ি কেনো দেয়া হলো জানতে চাইলে যুবকের ওপর চড়াও হন সোহেল কসাই। আজেবাজে কথাবার্তা বলতে থাকে জ্বীনত্বলা মল্লিকপাড়ার মৃত সাদা আলীর ছেলে অভিযুক্ত সোহেল কসাই।

এদিকে, পচা বাসি গরুর ভুড়ি বিক্রির প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত ওই যুবক মোবাইলফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। বলা হয়, এখনও পচা বাসি গরুর ভুড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। ওইসময় তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি, আপনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানান’। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি উপজেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদকে ঘটনাস্থলে পাঠান। কিছুক্ষণ পর আব্দুল মজিদ এসে সোহেল কসাইয়ের কাছে গিয়ে তাকে অনুরোধ করেন পচা ও বাসি ভুড়িটা বদলে দেয়ার জন্য। ভুক্তভোগী যুবককে বলেন, ‘এখান থেকে ভুড়ি কেনেন কেন? এসময় ভুড়ি বদলে দেয়া তো দূরের কথা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সামনেই ওই যুবককে জবাই করারও হুমকি দেন সোহেল কসাই। দীর্ঘ তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও প্রশাসনিক কোনো কর্মকর্তার হদিস না পেয়ে ফিরে যান ওই যুবক। অসাধু ব্যবসায়ীর অপরাধের শাস্তির আশায় প্রশাসনে অভিযোগ করে পেলেন না বিচার বরং সোহেল কসাইয়ের লাঞ্ছনা নিয়েই ফিরতে হয়েছে ওই যুবককে।

ভুক্তভোগী যুবক আরও জানান, ইউএনও সাহেবকে ফোন দিলে তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানাতে বলেন। তাকে ফোন দেয়ার পর একজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। তার ভাবখানা দেখে মনে হলো পচা বাসি ভুড়ি বিক্রি করা কসাইয়ের কোনো অপরাধ না, আমি কিনেছি এটাই বড় অপরাধ। ওই কর্মকর্তার সামনেই আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে, হুমকি দিচ্ছে। সবথেকে বড় কথা তখনও পচা ভুড়ি বিক্রি করা হচ্ছিলো সেখানে। অথচ তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না! বর্তমান সময়ে এসেও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়া বড়ই দুঃখজনক!

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এএইচএম শামিমুজ্জামান জানান, ঘটনাটি শুনে বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে নিচের বাজারে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদকে পাঠানো হয়। আধাঘণ্টা পর এসিল্যান্ডকে ফোন দিতে বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহানকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি একটি প্রশিক্ষণে রয়েছেন বলে জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে যোগাযোগ করতে বলেন। এভাবে অনেকক্ষণ ভুক্তভোগী ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকার পর ফিরে যান। তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ তো কাউকে শাস্তি দিতে পারে না। এটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমাকে ভুক্তভোগী ও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। পরে আমি সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য বলি। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। আমি দাফতরিক কাজে বদরগঞ্জ এলাকায় ছিলাম। বিকেলে এলাম। যখন ঘটনাস্থলে কেউ যায়নি তখন পুনরায় আমাকে ফোন দিয়ে জানানো প্রয়োজন ছিলো।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More