চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ : সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেক চেয়ারম্যান তবুও শঙ্কা

ফেনী ও ভোলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাই নির্বাচিত

স্টাফ রিপোর্টার: ইভিএম’র মাধ্যমে আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের ৫৭ জেলায় একযোগে হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ইসি কার্যালয়ের মনিটরিং সেল থেকে এসব কেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটাররা মোবাইলফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আরও বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ এসেছিলো, সেগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন আনা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মতোই ভোট হবে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় নির্বাচন সরাসরি মনিটর করবে কমিশন।’ এর আগে, শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয় জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। দ্বিতীয় বারের মতো আজ সারা দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৬৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ফেনী ও ভোলায় চেয়ারম্যানসহ সদস্য সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন নেই। এছাড়া আইনি জটিলতায় স্থগিত রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ভোটগ্রহণের আগে ২ দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারপরও তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি’র নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে এক হাজার ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে রয়েছেন ৬২২ জন প্রার্থী।

জানা গেছে, ভোট প্রদানের জন্য বুথে একাধিক ব্যক্তি একসাথে প্রবেশ করা যাবে না। বুথে যদি কোন কারণে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি হয় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইসি। এছাড়াও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধাপ্রদান, এজেন্টদের বাধাপ্রদান এবং জোরপূর্বক নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা যাবে না। ভোট কেন্দ্র ও কক্ষের মধ্যে যদি এমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তবে তা সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করবে ইসি এবং সাথে সাথেই বন্ধ হতে পারে ভোট। এমন কথা জানিয়েছেন নির্বাচন অফিসের এক কর্মকর্তা।

নির্বাচন নিয়ে ইসি হার্ডলাইনে উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, কোনভাবেই এ ভোটকে প্রভাবিত করা যাবে না। সিসি টিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ভোট কেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য ইসি মনোনীত একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বশরীরে উপস্থিত থাকবেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ইসির পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থাই থাকছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া আসা করতে পারেন সেলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পুলিশ, আনছার ও র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। কোন কেন্দ্রে অপ্রীতিকর কোন ঘটনার জন্ম হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল রোবাবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। জেলায় ৫৬৫ জন ভোটার চেয়ারম্যানসহ সাতজনকে নির্বাচিত করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জেলা পরিষদের দায়িত্ব বুঝে দেবেন। নির্বাচনে ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। নির্বাচনকে সফল করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন করা হবে। নির্বাচনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেমদ সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেমদ বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চারটি কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন মনিটরিং করা হবে। নির্বাচনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী ডিউটিরত থাকবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৫৬৫ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ১নং ওয়ার্ডে সদর উপজেলায় ১১৯ ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ৯১ জন এবং মহিলা ২৮ জন। ২নং ওয়ার্ডে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২১১ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ১৬১ জন এবং মহিলা ৫০ জন। ৩নং ওয়ার্ডে দামুড়হুদা উপজেলায় মোট ভোটার ১১৮ জন । এর মধ্যে পুরুষ ৮৯ জন এবং মহিলা ২৯ জন। ৪নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯০ জন এবং মহিলা ২৭ জন।মোট ভোট কেন্দ্রে সংখ্যা ৪টি এবং বুথ সংখ্যা ৮টি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা, আব্দুল ওদদু শাহ ডিগ্রি কলেজে দামুড়হুদা উপজেলা এবং জীবননগর থানা পাইলট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জীবননগর উপজেলার ভোটাররা ভোট প্রদান করবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, মাহফুজুর রহমান মনজু (মোটর সাইকেল), আরেফিন আলম রঞ্জু ( ঘোড়া) এবং আব্দুস সালাম (চশমা) প্রতীকে প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

সংরক্ষিত আসনে ১নং ওয়ার্ডে (চুয়াডাঙ্গা সদর-আলমডাঙ্গা) মনিরা খাতুন (ফুটবল), কাজল রেখা (বই), বিথী খাতুন  (টেবিল ঘড়ি), হাছিনা খাতুন (মাইক) এবং সামসাদ রানু (হরিণ)  প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সংরক্ষিত আসনে ২নং ওয়ার্ডে (দামুড়হুদা-জীবননগর) নাহার বানু (ফুটবল), আদুরী খাতুন ( দোয়াত কলম), ইয়াসমিন খাতুন (মাইক), শিরিনা পারভীন (হরিণ) এবং কহিনুর বেগম (বই) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ১নং ওয়ার্ডে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় শহিদুল ইসলাম সাহান (তালা), আব্দুর রউফ (টিউবওয়েল), জহুরুল ইসলাম (বৈদ্যুতিক পাখা), মাফলুকাতুর রহমান (হাতি) এবং মিরাজুল ইসলাম কাবা (উটপাখি) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ২নং ওয়ার্ডে আলমডাঙ্গা উপজেলায় এএইচএম মোয়াজ্জেম (অটোরিক্সা), মোল্লা জাফর উল্লাহ (ঘুড়ি), আলতাফ হোসেন (হাতি), খলিলুর রহমান (বৈদ্যুতিক পাখা), মজনু রহমান (তালা), মিজানুর রহমান (টিউবওয়েল) এবং তপন কুমার বিশ্বাস (উটপাখি) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৩নং ওয়ার্ডে দামুড়হুদা উপজেলায় অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম (বৈদ্যুতিক পাখা), নস্কর আলী (তালা) এবং শফিউল কবির (টিউবওয়েল) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।  ৪নং ওয়ার্ডে জীবননগর উপজেলায় মোসাবুল ইসলাম লিটন (হাতি), মিতা খাতুন (টিউবওয়েল) এবং কবির আহম্মদ (তালা) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। আজ সোমবার অক্টোবর সকাল ৯ টা থেকে দপুর ২টা পর্যন্ত জেলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। গতকাল রোববার ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন  অফিস।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী, গাংনী উপজেলা মিলনায়তন ও মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স মিলনাতয়নে স্ব স্ব উপজেলার ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদন্দ্বীতা করছে। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. আব্দুস সালাম ও সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল। সদস্য পদে সদর উপজেলায় ৩ জন, গাংনীতে ৪ জন এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১ এ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৩ জন। ২নং ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ২৯৫ জন ভোটারের মধ্যে আমদহ ইউনিয়নে এক জন ও কাথুলী ইউনিয়নের এক মেম্বরের মৃত্যুজনিত কারণে ভোটার সংখ্যা এখন ২৯৩। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও একটি উপজেলা পরিষদে ভোটারের সংখ্যা ১০৬ জন। গাংনী উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও একটি উপজেলা পরিষদ মিলে মোট ভোটার ১৩২ এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন ও একটি উপজেলা পরিষদ মিলে ভোটার রয়েছেন ৫৫ জন। স্থানীয় সরকার বিভাগের এই দপ্তরগুলোর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ স্থাপন করা হবে। একটি পুরুষ ভোটার অন্যটিতে নারী ভোটাররা ভোট প্রদান করবেন। বুথের মধ্যে প্রবেশ করে ইভিএম এ ভোটাধিকার প্রদান করবেন ভোটাররা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More