একাধিক ভাগে বিভক্ত চুয়াডাঙ্গা বিএনপির কর্মী সমর্থকদের দীর্ঘশ্বাস

ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের ঐক্য চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে কোনপক্ষই পাননি তাকে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে একাধিক ভাগে বিভক্ত। দু’আড়াই বছর আগে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন এক কাতারে শামিল হলেও এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের এক পক্ষে অংশ নেয়া এবং না নেয়া নিয়ে বিভ্রান্তেরও সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক বিষয়টি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘সর্বাত্মক চেষ্টা করে সকলকে এক জায়গায় করতে না পারার করনে কোনপক্ষের সাথেই থাকেনি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ককেই বাদ দিয়ে যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করে পুর্নগঠিত কমিটিরও মেয়াদ আড়াই বছর পর। প্রথম দিকে তৃর্ণমূল পর্যায়ের কমিটি গঠনের বিশেষ উদ্যোগ দেখা দিলেও তখনই তা থমকে যায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় দেশের অধিকাংশ জেলায় কমিটি পুর্নগঠনের প্রস্তুতি চলছে। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে প্রশ্ন দানা বেধেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি কি আদৌ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব পাবে? জবাব মিলছে না। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী। এদিনেও চুয়াডাঙ্গায় পৃথকভাবে দুটি স্থানে দুপক্ষই নিজেদের আয়োজিত কর্মসূচিকে জেলা বিএনপির কর্মসূচি বলে দাবি করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। অপরদিকে পৃথক আয়োজনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফ। এ পক্ষের আয়োজনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু শরিক হন বলে দাবি করে পত্রিকায় প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। পরবর্তিতে প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি মাহমুদ হাসান খান বাবু এ পক্ষে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ^াসকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫১জন। তাকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর মাহমুদ হাসান খান বাবুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। এর মাঝে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হক, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শাহ, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুস সালেহীন লিটনসহ বেশ ক’জন মৃত্যুবরণ করেছেন। যুগ্মআহ্বায়ক মুজিবুল হক মজু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পৌর নির্বাচন করার কারণে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। ভাংবাড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন লাড্ডুও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ঘোষণা দিয়ে দল ত্যাগ করেছেন। অপরদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য সহিদুল ইসলাম বিশ^াসের মেয়ে মিলিমা ইসলাম মিলি ও দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সালমা পারভিন পারুলকে আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব সদস্যদের মধ্যে যে পক্ষে যুগ্ম আহ্বায়করা রয়েছেন তাদের পক্ষে আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যসহ অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে গত সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পক্ষেরও দাবি তাদের পক্ষেই রয়েছেন অধিকাংশ নেতাকর্মী। উভয়পক্ষের দাবি নিয়ে জেলা বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে যেমন ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি, তেমনই গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী পালনের আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর ঐক্যপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গও উঠে আসছে আলোচনায়। চুয়াডাঙ্গা বিএনপির সকল নেতা কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে চুয়াডাঙ্গার কোন কর্মসূচিতে অংশ নিবেন না বলে প্রচারও হয়। এরপর যখন শরিফুজ্জামান শরিফ পক্ষের আয়োজনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন বাবু খান বলে দাবি করা হয় তখন প্রশ্ন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। মাঝে করোনা ভাইরাসের কারণে রাজনৈতিক কর্মকা-ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আগে সর্বাত্মক চেষ্টা করেও যখন ঐক্যবদ্ধ করতে পারিনি, তখন কোনপক্ষের আয়োজনেই সরাসরি কিম্বা ভার্চুয়ালি অংশ নিইনি। তবে ঐক্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্তও যদি সকলকে এক কাতারে নিয়ে আনতে না পারি তা হলে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব থেকে সরেও দাঁড়াতে পারি।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More