চুয়াডাঙ্গায় ফ্রিজ কেনার ধুম : বিপনী বিতাণগুলোতে গাঁ ঘ্যাসা ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার: ‘এইযে আপু শুনছেন? জি¦ আপনাকেই বলছি। শিশু সন্তানকে সাথে এনেছেন, মাস্কও পরেননি। জানেন তো, মাস্ক না পরার কারণে করোনা ভাইরাস প্রাণটায় কেড়ে নিতে পারে! মুখে মাস্ক পরুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন’। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বেশকিছু স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবেই মাইকিংয়ে প্রচার চলছে। তারপরও কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ঈদ বাজারের ক্রেতা সাধারণ সতর্ক হচ্ছেন? কেউ হচ্ছেন কেউ হচ্ছে না। ভাদ্রের যেমন ভ্যাপসা গরম, তেমনই ঠাসাঠাসি ভিড়। লকডাউনের বিধি নিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর থেকে চুয়ডাঙ্গার বিপনী বিতানগুলোর দৃশ্য অনেকটাই অভিন্ন। শুধু শাড়ি কাপড় জামা প্যান্টের দোকানেই নয়, উপচেপড়া ভিড় ফ্রিজের দোকানেও। প্রতিবারই কুরবানির ঈদ এলেই রেফ্রিজারেটর কেনার ধুম পড়ে।
গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কয়েকটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানের সামনে নজর রেখে দেখা গেছে, এসব দোকানের অধিকাংশ ক্রেতাই নারী। বেশিরভাগ ক্রেতা কিনছেন ফ্রিজ। এসব দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন নারী ক্রেতার সাথে কথা বললে, তাদের মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা একজন বললেন, করোনা বলে বাড়ি বসে থাকলে তো হবে না। এক বছর ধরে ফ্রিজ কিনবো বলে টাকা গুছিয়েছি। বরের পকেট কেটেছি, হাঁস মুরগির ডিম বেঁচেছি, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে পালন করা ছাগলটাও কোরবানির হাটে দিয়েছি শুধু এই ফ্রিজ কিবনো বলে। চুয়াডাঙ্গার প্রধান ডাকঘরের বিপরীতে মাইওয়ান মিনিস্টার গ্রুপের শো রুম। এ শো রুমের সামনে দাঁড়িয়েই কথা হয় আরও কয়েকজন নারী ক্রেতার সাথে। এদের পাশে অবশ্য তাদের স্বামীরাও ছিলেন। এরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ঈদে ভুট্টো বেঁচে কিনলাম রঙিন টিভি। বাড়ির গিন্নিকে কথা দিয়েছিলাম, গরু মোটা তাজা করার কাজে সহযোগিতা করো। তোমার ফ্রিজ কিনে দেবো। হাটে গরু বিক্রির পর ফ্রিজ না কিনে দিলে ঘরে কি শান্তি থাকবে?
চুূয়াডাঙ্গা জেলা শহরে মাইওয়ান মিনিস্টার গ্রুপের শোরুমসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির শো রুম রয়েছে। ওয়ালটন, মাইওয়ান মাইচয়েজ, যমুনা, স্যামসং, সিঙ্গার, এলজি বাটারফ্লাই, বেস্ট ইলেক্ট্রনিক্স, মারসেল, শার্প. জেনারেলসহ প্রায় প্রতিটি শো রুমেই ফ্রিজ ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ওয়াল্টন, মাইওয়ানসহ প্রায় প্রতিটি কোম্পানির শো রুমেই গত কয়েকদিন ধরে রেফ্রিজারেটর বিক্রির হিড়িক পড়েছে। অধিকাংশ ক্রেতাই গ্রামাঞ্চলের। শো-রুমগুলো থেকে হরেক রকমের অফারও দেয়া হচ্ছে। কে কোন কোম্পানির শো-রুম থেকে কি পরিমাণের ক্যাশব্যাক পেলেন তার তেমন হদিস না মিললেও প্রচার প্রসারে কোনো কোম্পানির থেকে কোন কোম্পানি কম নয়। বাদুরতলার ওয়াল্টন শো রুমে ফ্রিজ কেনার হিড়িক যেনো লেগেই রয়েছে। এ শো রুমের সামনের কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলতে গেলে তারও বলেছেন, ফ্রিজ এখন আর সৌখিনতার জন্য নয়, প্রয়োজনীয়তার জন্যই কিনতে হচ্ছে। কনকা শো রুমের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান মিলনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, ২২ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুল্যের ফ্রিজ রয়েছে আমাদের শো রুমে। ফ্রিজ কিনলে স্ক্যাচ কার্ড দেয়া হচ্ছে তাতে। থাকছে ক্যাশ ব্যাকের সুযোগ। এলজি বাটারফ্লাই শো রুমের ম্যানেজার মনিরুল আলম বলেন, আমাদের শো রুমে ২৪ হাজার থেকে ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে। এক থেকে একশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট অফার রয়েছে আমাদের। ওয়াল্টন শো রুমের ম্যানেজার বিশ^জিৎ রায় বললেন, আমাদের শো রুমে ১৯ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৬৫ হাজার ৯শ টাকার ফ্রিজ রয়েছে। ঈদ অফারের মধ্যে রয়েছে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট। যমুনা শো রুমের ম্যানেজার রফিকুল হাসান বলেন, ১৯ হাজার থেকে ৩৬ হাজার ৮শ টাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে আমাদের শো রুমে। ৫ থেকে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে এবারের ঈদ অফারে। স্যামসং শো রুমের ম্যানেজার ইফতিয়ার আহমেদ বললেন, ৩৪ হাজার ৯শ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯শ টাকা মূল্যের ডাবল ডোর ফ্রিজ রয়েছে আমাদের শো রুমে। ঈদ অফারে রয়েছে স্ক্যাচকার্ড ঘষে ক্যাশ ব্যাক। সিঙ্গার প্লাস শো রুমের ম্যানেজার হামিদুর রহমান বললেন, আমাদের শো রুমে ২০ হাজার ৯শ ৯০টা থেকে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে। ঈদ অফার হিসেবে রয়েছে পণ্য কিনে কার্ড ঘষলেই পুরষ্কার। মাইওয়ান মাইচয়েজ শো রুমের ম্যানেজার বললেন, ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫শ টাকার ফ্রিজ রয়েছে। ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়েছে এবারের ঈদে। মাইওয়ান মিনিস্টার শো রুমের ম্যানেজার কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের শো রুমে ১৭ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে। ঈদ অফারের মধ্যে রয়েছে ২শ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট।
চুয়াডাঙ্গার ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকানগুলোর অধিকাংশ ব্যবস্থাপকের অভিন্ন উক্তি, প্রতিবার কুরবানীর ঈদে ফ্রিজ বিক্রি বেশি হয়। আগে শহরের ক্রেতাই থাকতো বেশি। কয়েক বছর ধরে গ্রাম বাংলার ক্রেতা বেড়েছে বহুগুণ। মাধ্যম মানের ফ্রিজই বেশি বিক্রি হয়। ২৪ হাজার থেকে শুরু করে ৩২ হাজার টাকা মূল্যমানের ফ্রিজই বেশি বিক্রি হচ্ছে এখন। করোনা না থাকলে ফ্রিজ বিক্রি আরও বাড়তো। কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে মৌসুমী, তানিয়া, আফরোজা, আব্দুর রহমানসহ অনেকেই বলেছেন, কুরবানির ঈদে ফ্রিজের প্রয়োজন বেশি। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখে ফ্রিজ কেনার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ জন্যই করোনা ভাইরাসের মধ্যেও ফ্রিজ কিনতে দোকানে আসা। জেলা শহরের অন্যান্য বিপণী বিতানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। যদিও বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে প্রত্যাশিত পরিমাণের পণ্য বিক্রি করতে না পারার দীর্ঘশ^াস। এদের বক্তব্য, করোনা না থাকলে যে পরিমানের কেনা বেচা হয় এই করোনার মধ্যে সেটা নেই। অনেকেই করোনার কারণে কেনাকাটা করতে বাজারে আসছেন না। যারা আসেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব নেই। সকলেই হুড়ো হুড়ি করে পছন্দের পন্য আগে কিনে বাড়ি ফেরার তাড়া। প্রসাধনীর দোকানে ভিড় জমিয়ে কেনা বেশ ক’জন ক্রেতার সাথে কথা বলতে গেলে খানেকটা ভ্রুকুচকে বলেন, প্রসাধনী নিত্যপ্রয়োজনীয়। এসব আপনারা কি বুঝবেন। ঈদ বলে কথা। তারপর আবার আসছে কঠোর থেকে কঠোরতর লকডাউন। তার আগে প্রয়োজনীয় প্রসাধনী না কিনলে হবে কেনো? ভিড়ের মধ্যে মাস্ক না পরা কয়েকজনের নিকট জানতে চাওয়া হয়, মাস্ক না পরলে কতটা ক্ষতি তা জানেন? এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঢুকে পড়েন ভিড়ের মধ্যে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More