চুয়াডাঙ্গা শহরের সড়কে অটো রিকশার বিশৃঙ্খলাসহ নানা অনিয়ম : বাড়ছে যানজট 

আনোয়ার হোসেন: পালকি গেলো, এলো গোল চাকার ঠেলাগাড়ি। তাতে প্যাডেল জুড়ে নাম দেয়া হলো রিকশা। ইঞ্জিন জুড়ে বলা হলো মোটরগাড়ি। এরপর? ইঞ্জিনের বদলে পুনঃশক্তি অর্জনের ব্যটারি তথা বিদ্যুত দিয়েই ঘুরছে গাড়ির চাকা। আকাশে উড়ছে উড়োজাহাজ। তারপর! বিজ্ঞানের বদৌলতে মানব সভ্যতার হাতে কি আসছে কে জানে! তবে যাই আসুক পালকি রিকশার মতো ইঞ্জিন চালিত গাড়িও যে জাদুঘরের পথে তা বুঝতে বাকি নেই বোদ্ধাদের।

দু চাকার ঠেলা তিন চাকায় উন্নীত করে পা দিয়ে ঘোরানো হয় যখন তখনও কি নতুন মানতে কষ্ট ছিলো? ঠেলা টানাদের মধ্যে কর্মহীন হওয়ার শঙ্কাতো ছিলোই। যেমন কম্পিউটার আসার সময় বিভিন্ন দফতরে করনিকরা আন্দোলন পর্যন্ত করে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এখন? কম্পিউটার ছাড়া চলেই না। রিকশার বদলে ব্যটারিচালিত যাত্রী বহন করা যান যখন এলো তখনও শুনতে হয়েছে কত রকমের কথা। প্রয়োজনের তাগিদেই প্যাডেলের বদলে রিকশার চাকাও ঘুরছে বিদ্যুত শক্তি দিয়ে। তাতে লাভ নাকি লোকসান? তর্কের জন্য তর্ক হতে পারে, যুক্তির পাল্টা যুক্তি তর্কবাগিশদের মুখস্ত থাকে। সুবিধাটাই যে মানুষ গ্রহণ করে তা অতীত বিশ্লেষনে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ফলে সড়কের দশা এখন যেমনই হোক, অটো বা ইজিবাইক বিতাড়িত এখন অসম্ভব। তা হলে উপায়? ব্যবস্থাপনা। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হবে না, শহরে যানজটও বাড়বে না। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে সম্প্রতি ভয়াবহ যানজটের দৃশ্য দেখে পুরোন দিনের পালকিও উঠে আসছে পথচারীদের মুখে। তাদের আক্ষেপ, পুলিশ কেনো সড়কের যানজট নিরসনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছে না? কেনোই বা অটোচালকদের মধ্যে নূন্যতম দায়িত্ববোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে না? বেশ ক’জন অটো চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শহরের অধিকাংশ ইজিবাইক বা অটোরিকশা চালান ভাড়ায় নেয়া চালক। মালিককে দিনপ্রতি ৪শ টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। ৪শ টাকা আয় করে তারপর নিজের চাল ডাল কেনার টাকা জোগান তারা। ফলে সড়কে বের হওয়া যাত্রীদের দিকেই নজর থাকে অটোচালকদের। তাছাড়া সড়কে যানবহন চালানোর নূন্যতম নিয়মও এদের অধিকাংশই জানেন না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বর্তমানে কতটি অটো চলে? পরিসংখ্যান নেই। পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আব্দুল মহাইমিন বললেন, ৮শ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন ২শ অটো। বাস্তবে সড়কে চলছে দু আড়াই হাজারের অধিক। এমনিতেই জেলা শহরের পাশে লিংরোড নেই। শহরের মহল্লাগুলোর অধিকাংশেরই অলিগলি একেবারেই চাপা। একটি অটো ঢোকানো হলে পাশ দিয়ে আর একজনের যাওয়ার জো থাকে না। আর শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো? লিংরোড না থাকার কারণে শহরের মধ্য দিয়েই বড় বড় বাস ট্রাক চলে। ট্রাক স্ট্যান্ড না থাকার কারণে, সড়কের ধারে তা রেখে দিব্যি ধোয়া মোঁছার কাজ করা হয়। এতে পথচারীদের সমস্যার অন্ত নেই। এরপর যুক্ত হয়েছে অটো। অবাক হলেও সত্য যে, অটোচালকদের অধিকাংশই অদক্ষ। ফলে যেখানে সেখানে যাত্রী দেখে হুটহাট থেমে সমস্যা প্রকট করে তুলছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। শহীদ হাসান চত্বরের দশা দিন দিন ভয়াবহ যানজটের স্থানে রূপ নিয়েছে। শহীদ হাসান চত্বর থেকে কোর্ট সড়কের শুরুতে যেভাবে অটোগুলো বিশৃংখলভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকে তা দেখে শহরের সড়কে নূন্যতম নিয়ম কানুন আছে বলে মনে হয় না। শহীদ আবুল কাশেম সড়কেও অভিন্ন দশা। শহীদ হাসান চত্বরের অদূরেই শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দু ধারে রয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন সংস্থাগুলোর কাউন্টার। এসব কাউন্টার থেকে শুধু টিকিট বিক্রিই করা হয় না, যাত্রীও তোলা হয় কাউন্টারের সামনে বড় বড় বাস থামিয়ে রেখে। বড় বাস রাস্তার বিশাল অংশ জুড়ে যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখন শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার বলে যেমন মন্তব্য করেছেন অনেকে, তেমনেই শহীদ আবুল কাশেম সড়কের ফেরীঘাট সড়কের দিকেও ভয়াবহ যানজট যেনো লেগেই থাকে। জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার স্টেশনের গাড়ি ওই রাস্তায় ঢুকতে কতোটা সময়ে নেবে তা অনুমান করাও কঠিন। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পরিত্রাণের পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামীতে আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। ফলে এখনই শৃংখলা ফেরাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে অটো চালকদের দু এক দিনের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। এসব অভিমত সচেতন মহলের।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More