দামুড়হুদায় উদ্ধার হওয়া খুলি মিমের বলে দাবি, সে নানা বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ হয়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের খুলি ও হাড় কুষ্টিয়ার কলেজছাত্রী মিম খানমের বলে শনাক্ত করেছে তার পরিবার। গতকাল রোববার দুপুরে দামুড়হুদা মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে কঙ্কালের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া ভ্যানেটি ব্যাগ, পরনের কাপড়, জেএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কসিট দেখে কঙ্কালটি মিমের বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বাবা-মা। নিহত মিম খানম কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার খাঁ ওরফে মধু খাঁর মেয়ে। মিম খানম স্থানীয় আমলা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত শনিবার বিকেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় ওই কঙ্কালের খুলি ও হাড় উদ্ধার করে পুলিশ। কঙ্কালের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় ভ্যানেটি ব্যাগ, পরনের কাপড়, জেএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কসিটসহ বেশ কিছু আলামত।

পুলিশ জানায়, শনিবার বিকেলে দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের কওমী মাদরাসার পেছনে মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের মাথার খুলি ও হাড় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কঙ্কালের খুলি, হাড়সহ বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় একটি ভ্যানেটি ব্যাগ, রোবকাসহ কিছু কাপড়। পরে গতকাল সকালে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের খুলি, হাড়সহ বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অজ্ঞাত আসামিরা কয়েক মাস আগে মিমকে হত্যা করে তার মরদেহ ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে আবর্জনার মধ্যে পুতে ফেলে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশকে সন্দেহভাজন এক তরুণের নাম জানিয়েছেন মিমের পরিবারের সদস্যরা। দামুড়হুদা মডেল থানায় মেয়ের কাপড়সহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মিমের বাবা-মা।

নিহত মিম খানমের মা সারেজান নেছা জানান, গত ২ মাস ২২ দিন আগে নানা বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সুলতানপুরে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মিম। অনেক খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে সংশ্লিষ্ট থানায় নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য গেলে তা পুলিশ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মিমের বাবা মতিয়ার খাঁ জানান, তিন মেয়ের মধ্যে মিম ছিলো সবার ছোট। খুব আদরের ছিলো মিম। বাকি দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। গত ১৭ আগস্ট মিম বাড়ি থেকে তার নানাবাড়ি মিরপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে যায়। সেখানে এক দিন থেকে পরদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয় মিম। এরপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে সময় কয়েক দিন ধরে তিনি আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ আশপাশের গ্রামে মেয়ের খোঁজ করেন। মেয়েকে না পেয়ে ঘটনার ১৫-১৬ দিন পর দৌলতপুর থানায় গেলে পুলিশ কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা নেয়নি বলে তার অভিযোগ। তিনি আরও জানান, কেউ তার মেয়েকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি। তবে, তার স্বজনরা জানান, মাস তিনেক আগে মিমের বিয়ে ঠিক করে তার পরিবার। কিন্তু তার সাথে একই এলাকার একটি ছেলের প্রেম সম্পর্ক ছিলো। পরে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করলে ওই ছেলের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মিম। এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলো কলেজছাত্রী মিম।

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান, গত রাতেই ওই ঘটনায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন উপ-পরিদর্শক কেরামত আলী। জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। কলেজছাত্রী মিমকে বেড়ানোর কথা বলে নির্জন স্থানে নিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহটি ভাসতে ভাসতে দামুড়হুদায় চলে আসে এবং নদীর পানি কমে যাওয়ায় কঙ্কাল বেরিয়ে আসে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More