নতিপোতায় ত্রি-মুখী ও নাটুদহে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

জহির রায়হান সোহাগ/হাসমত রেজা: শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে দামুড়হুদার নতিপোতা ও নাটুদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করেছে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিস। আজ শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে নির্বাচনের সরঞ্জাম।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতিপোতা ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫ হাজার ১২৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭  হাজার ৫শ’ ৭ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৬শ’ ২০ জন। এ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ ১৪ জন, ২ নং ওয়ার্ডে ৯শ’ ১১ জন, ৩ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৭শ’ ২৩ জন, ৪ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৯শ’ ৬৭ জন, ৫ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩শ’ ৮৯ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৪শ’ ৫ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ২ হাজার ৯৭ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৯শ’ ৩৩ জন ও ৯ নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ ৮৮ জন। এ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১০টি কেন্দ্রে।

নাটুদহ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৪ হাজার ৮২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭  হাজার ৩শ’ ৭৫ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৪শ’ ৫১ জন। এ ইউনিয়নে ১ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৪শ’ ১৮ জন, ২ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৮শ’ ২৫ জন, ৩ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৪শ’ ৯৫ জন, ৪ নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৭শ’ ৮৯ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৫শ’ ৩৫ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৯শ’ ৩৪ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ২ হাজার ৪শ’ ৩৭ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩শ’ ৪৩ জন ও ৯ নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন। এ ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, নতিপোতা ইউনিয়নের ৫ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হকের পক্ষে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কাজ করায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছেন তিনি বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা। মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হাসান গেলো নির্বাচনে কিছু ভোটে পরাজিত হওয়ায় তার প্রতি মানুষের সহানুভূতির কমতি নেই। আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়ামিন আলীর আশা এবার তিনিই নির্বাচিত হবেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীসহ ওই দলের দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনিরেরও জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। মাঠে  তেমন সাঁড়া নেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের। নতিপোতা ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদের ১১ জন ও সাধারণ সদস্য পদের ২৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে হিসেব-নিকেশ।

অপরদিকে, নাটুদহ ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে ভোটের মাঠে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি। তার পক্ষেও কাজ করেছেন উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। অটোরিক্সা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ইয়াচনবীর চেয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হালিমের অবস্থান আরও ভালো বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে, নাটুদহ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তাই বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন মাস্টার, আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা ফজলুল হক মোটরসাইকেল ও টেবিল ফ্যান প্রতীকের আমিনুল ইসলাম মোক্তার অবস্থান সন্তোষজনক নয় বলে জানা গেছে। এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদের ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদের ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এখানেও একাধিক প্রার্থী থাকায় উঠানামা করছে প্রার্থীদের ভোটের হিসেব।

ওই দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এমএজি মোস্তফা ফেরদৌস জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের। আজ দুপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য ভোটের সরঞ্জাম। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, দুটি ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ২ প্লাটুন বিজিবি। র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় কাজ করবেন আনসার সদস্যরাও।

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করবে ১৬ জনের একটি টিম। এছাড়া ৩টি কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে ৬ জন পুলিশ সদস্যের ১টি মোবাইল টিম, ৫টি কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১টি স্ট্রাইকিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে। কাজ করবে জেলা পুলিশের রোবোকপ টিম। নির্বাচনের দিন টহল দেবে র‌্যাব-৬ এর দুইটি টিম। তিনি আরও জানান, নতিপোতা ইউনিয়নে কালিয়াবকরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদ, ছুটিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পোতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। নাটুদহ ইউনিয়নে চন্দ্রবাস ও চারুলিয়া এ দুটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে বেশি নজরদারীতে থাকবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের দিনধার্য করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভোটের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর ওই দুটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More