পুলিশ ক্যাম্প ধরে রাখতে পারলো না আলমডাঙ্গার খাসকররাবাসী

প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর নিরুপায় হয়ে উন্মুক্ত করে দেয়া হলো রাস্তা

খাসকররা থেকে ফিরে আলম আশরাফ: আলমডাঙ্গার খাসকররা পুলিশ ক্যাম্প ধরে রাখতে পারলো না এলাকাবাসী। প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর গতকাল বুধবার বেলা ১টার দিকে অনেকটা নিরুপায় হয়ে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্প চলে যেতে রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয় এলাকাবাসী। এসময় ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ক্যাম্পের সব জিনিসসহ পুলিশ সদস্যদের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়া হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ক্যাম্পটি উঠিয়ে নেয়া হয় বলে গুঞ্জন উঠলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। খবর শুনে গতকাল বুধবার সকালে এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন যাতে পুলিশ ক্যাম্পটি রাখা হয়। অবশেষে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসার পর ক্যাম্পটি তুলে নেয়া হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর ক্যাম্প তুলে নেয়ায় এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররায় খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- ছিলো নিত্যদিনের সঙ্গী। এ কারণে ২০১২ সালের গোড়ার দিকে ক্যাম্পটি খাসকররা পুরাতন ইউপি ভবনে স্থাপন করা হয়। পরে নতুন ইউপি ভবনে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকেই চলছিলো ক্যাম্পের কার্যক্রম। ক্যাম্পটি স্থায়ী করার জন্য এলাকাবাসী ক্যাম্পের নামে ১শ’ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়। ৪ বছর আগে জায়গাটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়। ক্যাম্পের জায়গায় নতুন বিল্ডিং তুলে ক্যাম্পটি স্থায়ী হবে এমনটিই আশা ছিলো এলাকাবাসীর। এরই মধ্যে ক্যাম্পটি তুলে নিতে পুলিশ সুপার নির্দেশ দেন।
স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে পুলিশ সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের ছাদে রান্না করছিলেন। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু তাদের ছাদে রান্না করতে বারণ করেন। এ নিয়ে পুলিশ সদস্য ও চেয়ারম্যানের মধ্যে বাগবিত-া হয়। বিষয়টি গড়ায় পুলিশ সুপার পর্যন্ত। ওই সময়ই পুলিশ ক্যাম্প তুলে নেয়ার জন্য আলোচনা চলছিলো। মঙ্গলবার রাত থেকে ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। খবর শুনে বুধবার সকালে ক্যাম্পটি তুলে নিতে চাইলে খাসকররা বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ব্যবসায়ীদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে এলাকার নারী-পুরুষ রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসময় রাস্তায় ট্রাক্টর ভিড়িয়ে ও বাশ বেঁধে ব্যারিকেড তৈরি করেন তারা। বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার যান চলাচল। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক ও আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবীর। এসময় ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের শান্ত করার চেষ্টা করেন তারা। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ পুলিশের কাছে ক্যাম্পটি রাখার অনুরোধ করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক বলেন, ‘ডিআইজি স্যারের নির্দেশে ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্যাম্প চলে গেলেও এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় যা করার পুলিশ করবে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা চাইলে আবারও পুলিশ ক্যাম্প আসবে। ক্যাম্প স্থায়ী করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সাথে যোগযোগ করুন। যাতে খুব দ্রুত ক্যাম্প স্থাপন করা যায় সে ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করবো। তবে আজকে ক্যাম্প তুলে নেয়া হবে।’ এভাবে স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক। পরে স্থানীয়রা অবরোধ তুলে ক্যাম্প নিয়ে যেতে রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। দুপুর ১টার পর খাসকররা থেকে ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান।
বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ক্যাম্পটি চলে যাওয়ায় আমরা খুব নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছি। বর্তমানে খাসকররা বাজারে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকসহ ৫টি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। ১০-১২টি এনজিও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে। দীর্ঘ ৮ বছর পর ক্যাম্পটি চলে যাওয়ার কারণে এলাকাবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, পুলিশ ক্যাম্পটি স্থাপন করার পর থেকে বাজারের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলারও উন্নতি হয়েছে। কয়েক বছর আগে থেকে এ এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- নেই। নেই খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা পুলিশ ক্যাম্প না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন করে গজে উঠতে পারে একাধিক সন্ত্রাসী গ্যাং। সেই সঙ্গে বিস্তার হবে মাদককারবার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More