বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে

দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জু সাধারণ সম্পাদক হাজি শহিদুল ইসলাম

দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিএম মোজাম্মেল হক

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মঞ্জু সভাপতি শহিদুল সাধারণ সম্পাদক 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল, দর্শনা:

টানা ১৮ বছর পর আলোচনা-সমলোচনার যবনিকা টেনে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দর্শনা শহরের অডিটোরিয়ামে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্বে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মাহফুজুর রহমার মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়।

বেলা ১১টার দিকে শুরু হয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিকতা। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার পর শুরু আলোচনা সভা। তার আগে অতিথিদের আসন গ্রহণ ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। আওয়ামী লীগের ২০ ত্যাগি নেতাকে প্রদান করা হয় সম্মাননা স্মারক। পরে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি।

সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আজগার টগর এমপি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলাদেশের। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে তার সোনালী স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে রচনা করে কালো অধ্যায়ের। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত সরকারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল সরিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন সমৃদ্ধির পথে, ঠিক তখনই ব্যক্তি চরিতার্থ করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরকে সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়নকে নস্যাত করতে অহেতুক নাশকতাম‚লক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নিরিহ মানুষ হত্য, গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েমের বৃথা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া আজকের স্বাধীনতা ও জাতীয় পতাকা খামচে ধরতে তাদের বিষাক্ত নখ বিস্তার করেছে।

তিনি বলেন, আমরা সকল বাধা শক্ত হাতে মোকাবেলা করে উন্নয়নে ধারা অব্যাহত রেখেছি। বিগত সরকার দেশের মানুষকে ঠকিয়ে নিজেদের আখের গুছোতে সময় কেটেছে। তাই জনগণ তাদের উচিত জবাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপ ও স্বাধীনতাকামি মানুষের প্রতিরোধের মুখে বারবার তাদের সকল অপচেষ্টা ভেস্তে গেছে। দেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। শান্তিপ্রিয় বাঙালি শান্তিতে থাকতে চায় বলেই বারবার আ.লীগকে ক্ষমতার সিংহাসনে বসায়। একটি কথা মনে রাখতে হবে নেতৃত্ব যে পাননা কেন তৃর্ণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। দেশ, জাতি তথা দলের বৃহত্তর স্বার্থে সকলকে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিষ্ঠার সাথে। তাই আসুন দেশ, জাতি তথা সমাজের উন্নয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রত্যয়ী হই।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলার স্থপতি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এদেশের দামাল ছেলেরা। ৯ মাস আমরণ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে আমরা পেয়েছিলাম সার্বভৌম বাংলাদেশ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন স্বপ্ন দেখছিলেন একটি সমৃদ্ধশীল দেশ গড়ার, ঠিক তখনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিলো এ দেশের কলংকিত সন্তানেরা। দীর্ঘ ৩০ বছর ক্ষমতা ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট ও জাতীয় পার্টি সরকার। তারা দেশের কোন উন্নয়নই করতে পারেনি। বরং নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এ দেশের উন্নয়নের কথা ভাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আ.লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের মানুষ যেমন সুখে ও শান্তিতে রয়েছে, তেমনি বারবার জনগণ ভোট দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছে। তবে মনে রাখতে হবে যারা উপজেলা কমিটিতে আসছেন, তাদের কাজ করতে হবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য পারভিন জামান কল্পনা বলেন, মানবতার মা শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে দেশ থেকে নির্র্মূল করা হয়েছে সন্ত্রাস ও মাদক। দুর্নীতি দূরীকরণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্যগতিতে। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ব্রিজ-কালভাটসহ সর্বস্থরে লেগেছে উন্নয়নের ছোয়া।

জেলা আ. লীগের সহসভাপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকার ধর্মের নাম ভাঙিয়ে দেশবাসীকে ধোকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে নিজের আখের গুছিয়েছিলো। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আ. লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারো সুসংগঠিত হয়েছিলো আ.লীগের নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত হয়ে ১৯৯৬ সালে দেশের মানুষ নৌকা ভোট দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আ.লীগ ৪ বার আ.লীগ সরকার গঠন করেছে। ৮ বারে আ.লীগ সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। গোটা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন প‚রণ করেছেন তারই সুযোগ্য কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ যেমন নিরক্ষর মুক্ত, তেমনি ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। আমি আশাবাদি উপজেলা আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক এ কমিটিতে যারা আসবেন, তাদের যোগ্য নেতৃত্বে অবশ্যই দল আরো বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম আমরা। গণতন্ত্রে বিশ্বাসি আ.লীগ যা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে, তা করেও দেখিয়েছে। বিশ্ব দরবারে শেখ হাসিনা সরকার মানেই উন্নয়ন সরকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। আজকের এ সম্মেলনে দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মনে করি।

দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, নবগঠিত জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ অমল, আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক আলি মুনছুর বাবু, ইউপি চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম, সোহরাব হোসেন, হযরত আলী, কামাল উদ্দিন, আ.করিম, নিজাম উদ্দিন, আ.লীগ নেতা আবু সাঈদ খোকন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান ছোট, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান, দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম আলী তোতা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম রিংকু, দর্শনা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু প্রমুখ। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন বিকেল ৪টার দিকে একই সভাস্থলে শুরু হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ কমিটি ঘোষণা করেন। কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক শেষে এ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজি শহিদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন অতিথিরা। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More