স্বনির্ভর কর্মসূচির ২০০ গ্রাহকের ১৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ

আলমডাঙ্গার অগ্রণী ব্যাংক হারদী শাখার আওতায় গ্রাহকদের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড হারদী শাখায় স্বনির্ভর ঋণ কর্মসূচিতে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। উপকারভোগীদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা হলেও তা ব্যাংকে জমা দেয়া হয়নি। উপরন্ত গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল করে এবং ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্বনির্ভর কর্মসূচির তিনজন কর্মকর্তা টাকা আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে দুশতাধিক গ্রাহক বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মহসিন আলী স্বনির্ভর বাংলাদেশের ক্রেডিট অফিসার সাবিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ১৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ এবং গ্রাহকদের পাসবহি গায়েবের ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে অভিযুক্ত সাবিনা নিজে প্রায় তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি দাবি করেছেন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক কবির হোসাইন ও বর্তমান ব্যবস্থাপক মহসিন আলীর যোগসাজশে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ইউনিট ম্যানেজার নাটোরের সুপ্তি বৈরাগী ও এরিয়া ম্যানেজার কুষ্টিয়ার সাজেদুল হক গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া নামে ঋণ দেখিয়ে বেশিরভাগ টাকা নয়ছয় করেছেন। তাদেরকে চাপ দিলেই হিসাব পাওয়া যাবে।
ব্যবস্থাপক মহসিন আলী তাকে জড়িয়ে সাবিনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের যোগসাজশের কোনো সুযোগ নেই। সাবিনা নিজেকে রক্ষা করতে এসব ভুলভাল বকছেন।’ সাবেক ব্যবস্থাপক কবির হোসাইন এবং স্বনির্ভর কর্মসূচির দুই কর্মকর্তা সুপ্তি বৈরাগী ও সাজেদুল হকের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডসূত্রে জানা গেছে, স্বনির্ভর বাংলাদেশ ব্যাংকের হারদী শাখার আওতায় হতদরিদ্র নারীদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণদান শুরু হয়। বর্তমানে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩২৮ জন। কর্মসূচির শুরু থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত ঋণদান অব্যাহত থাকলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় জুলাই থেকে নতুন ঋণ দেয়া হয়নি। তবে, আদায় অব্যাহত ছিল। সাবিনা ক্রেডিট অফিসার হিসেবে টাকা আদায় করতেন। হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি ঋণখেলাপী ২০০জন উপকারভোগীকে কিস্তি পরিশোধের জন্য নোটিস দিলে হিসেবে গরমিল এবং টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আসে।
হারদী গ্রামের ববিতা খাতুন ৫০ হাজার ও সালেহা খাতুন ৪০ হাজার এবং কেশবপুরের সারা খাতুন ৬০ হাজার, সারতী রাণী ৭০ হাজার ও ফাতেমা খাতুন ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন সরাসরি ।
গত ১৭ এপ্রিল আলমডাঙ্গা থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আলমডাঙ্গার কুমারী গ্রামের মো. রঞ্জুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন স্বনির্ভর কর্মসূচির ক্রেডিট অফিসার পদে সংযুক্ত আছেন। স্বল্পমেয়াদি স্বনির্ভর ঋণ বিতরণ ও আদায় করে ঋণগ্রহীতাদের ব্যাংকের হিসাবে এন্ট্রি দেয়া তার দায়িত্ব। সম্প্রতি ব্যাংকের রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা যায়, সাবিনা আদায়কৃত অর্থের আংশিক জমা করেছেন। পাসবই ও ব্যাংকের লেজারের সঙ্গে পার্থক্য দেখা গেছে। তাতে প্রতীয়মান হয় যে, টাকাটা তিনি (সাবিনা) আত্মসাৎ করেছেন।
এই খাতে শাখার মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৩২৮জন হলেও মাত্র ১১৫ জনের বিপরীতের পাসবই ইস্যু করা হয়েছে এবং অসৎ উদ্দেশে ২১৩ জনের পাসবই গায়েব করা হয়েছে। পাসবই বিহীন গ্রাহকদেরকে কতো টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে কতো টাকা আদায় করা হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ৩০ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদে সাবিনা অকপটে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার এবং ব্যাংক কর্তৃক নিরীক্ষায় ধরা পড়া অর্থ পরিশোধের জন্য অঙ্গীকার করেছেন। প্রাথমিক হিসেবে আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ হলেও পরিমাণ বাড়তে পারে।
এদিকে অর্থ পরিশোধে লিখিত অঙ্গীকারের পর ১ এপ্রিল থেকে সাবিনা দুই সন্তানকে নিয়ে এলাকাছাড়া। থানায় লিখিত অভিযোগের পর সাবিনার স্বামী মো. রঞ্জু কুমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। সাবিনা বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে থাকায় তারা কিছুদিন সময় চেয়ে নেন।
আ.লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২৬ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলমডাঙ্গা থানায় ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক হয়। তিনি বলেন,‘ যতটুকু বুঝতে পেরেছি ম্যানেজারদের মধ্যে কিছু ঘাপলা আছে। সাবিনা আমাকে জানিয়েছেন, ব্যাংক এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’
সাবিনার স্বামী মো. রঞ্জু প্রশ্ন তোলেন, নতুন বরাদ্দ ও গ্রাহক হলেই সার্ভিস চার্জ থেকে সাবিনার বেতন দেয়া হতো। গত বছরের জুলাই থেকে বরাদ্দ না আসায় গ্রাহক তৈরি হয়নি। তাহলে ব্যাংক ম্যানেজার কোন স্বার্থে বিনা বেতনে সাবিনাকে ঋণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত রাখলেন? আবার, সাবিনার পাশাপাশি ব্যাংকের দুজন কর্মচারীকে (আব্দুল হক ও মিন্টু মিয়া) দিয়ে কেন টাকা আদায় করলেন? তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রমাণিত হবে।’
হারদী শাখার ব্যবস্থাপক মহসিন আলী জানান, ঘটনা তদন্তে আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এসএমএম কবির, সিনিয়র অফিসার গোলাম মাসুদ ও ব্যবস্থাপক মহসিন আলী। মহসিন বলেন, তদন্ত দলকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তা সম্ভব হয়নি। দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More